ডেঙ্গুতে মৃত্যু ছাড়ালো হাজার

ডেঙ্গুতে মৃত্যু ছাড়ালো হাজার

বিবিসি ওয়ান নিউজ

কিছুতেই কমানো যাচ্ছে না ডেঙ্গুতে মৃত্যু। প্রতিদিন অন্তত ১৫ জন মানুষ মারা যাচ্ছেন মশাবাহিত এ রোগে। যেখানে গত ২২ বছরে সারা দেশে ডেঙ্গুতে প্রাণ হারিয়েছেন ৮৭২ জন, সেখানে চলতি বছরের ৯ মাসেই মৃত্যু ১ হাজার ছাড়িয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গতকাল রোববার ডেঙ্গুতে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি হিসাবে এ নিয়ে গত ৯ মাসে প্রাণ হারালেন ১ হাজার ৬ জন। তার মধ্যে ৬৪৮ জন রাজধানীর বাসিন্দা আর ৩৫৮ জন ঢাকার বাইরের। একই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৮৮২ জন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখানেই শেষ নয়। দেশে আগামী তিন মাস থাকবে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। এতে মৃত্যু আরও বাড়তে পারে।

অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬, মার্চে ১১১, এপ্রিলে ১৪৩, মে মাসে ১ হাজার ৩৬, জুনে ৫ হাজার ৯৫৬, জুলাইয়ে ৪৩ হাজার, আগস্টে ৭১ হাজার ৯৭৬, সেপ্টেম্বরে ৭৯ হাজার ৫৯৮ এবং ১ অক্টোবর ২ হাজার ৮৮২ জন। মৃত্যুর হিসাবে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ছয়জনের মৃত্যু হয়। ফেব্রুয়ারিতে মৃত্যু হয় দুজনের। মার্চ ছিল মৃত্যুশূন্য, এপ্রিল ও মে মাসে দুজন করে মারা যান। জুনে ভয়াবহ আকার ধারণ করে ডেঙ্গু। সে মাসে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়। জুলাইয়ে প্রাণ হারান ২০৪ জন। আগস্টে ৩৪২ ও সেপ্টেম্বরে ৩৯৬ জন। আর চলতি মাসের প্রথম দিনে প্রাণ হারিয়েছেন ১৭ জন। কীটতত্ত্ববিদের মতে, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব না হলে আগামী বছর থেকে মশাবাহিত রোগটি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে। তখন মৃত্যু আরও বাড়তে পারে।

দুই যুগে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০০০ সালে দেশে ডেঙ্গুতে মারা যান ৯৩ জন। এরপর ২০০১ সালে ৪৪ জন, ২০০২ সালে ৫৮, ২০০৩ সালে ১০, ২০০৪ সালে ১৩, ২০০৫ সালে ৪, ২০০৬ সালে ১১ জন, ২০০৭ থেকে ২০১০ পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়নি কারও। আবার ২০১১ সালে মৃত্যু হয় ছয়জনের। ২০১২ সালে একজন, ২০১৩ সালে দুজন, ২০১৪ সালে কারও মৃত্যু হয়নি। ২০১৫ সালে ছয়জনের মৃত্যু হয়। ২০১৬ সালে ১৪ জন, ২০১৭ সালে ৮, ২০১৮ সালে ২৬, ২০১৯ সালে ১৭৯, ২০২০ সালে ৭, ২০২১ সালে ১০৫, ২০২২ সালে ২৮১ এবং ২০২৩ সালের গতকাল পর্যন্ত ১ হাজার ৬ জনের মৃত্যু হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বলছে, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। এর আগে ২০২১ সালে ২৮ হাজার ৪২৯ জন, ২০২০ সালে ১ হাজার ৪০৫ জন। ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন। আর ২০১৮ সালে ১০ হাজার ১৪৮ জন।

দেশের সবশেষ ডেঙ্গু পরিস্থিতি: গতকাল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২ হাজার ৮৮২ জন। এর মধ্যে রাজধানীর বাসিন্দা ৬২৯ আর ২ হাজার ২৫৩ জন রাজধানীর বাইরের। চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন ২ লাখ ৬ হাজার ২৮৮ জন। তার মধ্যে ৮৩ হাজার ৮৫১ জন রাজধানীর বাসিন্দা আর ১ লাখ ২২ হাজার ৪৩৭ জন রাজধানীর বাইরের।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৯ হাজার ৩৫৭ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। ঢাকার সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ৩ হাজার ১২০ এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৬ হাজার ২৩৭ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *